টক দই

টক দই এর উপকারিতা এবং অপকারিতা

টক দই এর উপকারিতা যেমন আছে, তেমনি অপকারিতাও আছে । দই বাঙালি জাতির কাছে বেশ জনপ্রিয় এবং ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার।

কারণ হিসাবে বলা যায়, সারা বিশ্বের মধ্যে বাঙালিরাই বোধ হয় একমাত্র জাতি যারা দুধের মর্ম বুঝতে শিখেছে, যার ফলস্বরূপ দই এর মত এত সুস্বাদু খাবার আমরা উপভোগ করতে পারি। মজা করে হলেও মনে হয় ভুল বলিনি, ঠিক না?

দই বা টক দই এর অনেক গুণাগুণ হয়তো এ যাবতকালে আপনারা শুনে এসেছেন, তবে বাস্তবতা এটাই যে, বেশি পরিমাণে দই খাওয়াটা, আপনার স্বাস্থ্যহানির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সে কারণে আজকের আর্টিকেলে আমরা টক দই এর উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক টক দইয়ে কি কি পুষ্টিগুণ থাকে

টক দই এ প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা আমাদের মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট এর ঘাটতি পূরণ করতে ব্যাপক সহায়তা করে থাকে।
এছাড়াও টক দইয়ে রয়েছে ভিটামিন ডি, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন বি-২ , ভিটামিন বি-১২। টক দই এ পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও
ভিটামিন-ডি থাকার জন্যে হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করতে এ ধরনের দই খুব কার্যকরী। সর্বপরি কথা হল, টক দই এর প্রচুর পরিমাণ
পুষ্টিগুণের প্রমাণ বর্তমান গবেষণা গুলোতেও দেখা যায়।

টক দই এর উপকারিতা কি কি?

টক দই আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক। এতে “ল্যাক্টোব্যাসিলাস অ্যাসিডোফিলাস” নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে। টক দইয়ের ব্যাকটেরিয়া অত্যন্ত উপকারী, এটি শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মেরে ফেলে এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এর ভেতরে আরো বেশ কিছু ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যেগুলো শরীরে প্রবেশ করার পর এক ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে। যা যেকোনো ধরনের সংক্রমণ ব্যাধি থেকে আমাদেরকে সারিয়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সহজ ভাবে বললে, দই এর ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়া আমাদের দেহে এক ধরনের এন্টিবডি তৈরি করে। যার ফলে পরবর্তীতে ভাইরাসজনিত যেকোনো ধরনের রোগে আক্রান্ত হলে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া আমাদের পক্ষে সহজতর হয়।

আমাদের দেহের রক্তে যে সকল খারাপ কোলেস্টরেল গুলো রয়েছে সেগুলো কমানোর ক্ষেত্রে অনেকাংশে ভূমিকা রাখে টক দই। আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সুতরাং আপনি যদি টক দই অথবা দই এর মতো দুগ্ধজাত খাবার খান তাহলে হৃদপিন্ডের রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে।
এ ছাড়াও টক দইয়ের নিম্নোক্ত উপকারিতাগুলো রয়েছে-

টক দই ওজন কমায়

আজকাল ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফ্যাট এড়িয়ে চলেন অনেকে। টক দইয়ে ফ্যাট কম থাকার কারনে এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ থাকে যা হজম করতে শরীরের অনেক সময় লাগে। আবার টক দই রক্তের কোলেস্টরল কমাতে বিশেষভাবে সহযোগিতা করে। সে কারণে এটি স্ট্রোক এবং হৃদপিণ্ডের সমস্যার ঝুঁকিও হ্রাস করে। টক দই একটি ভালো স্ন্যাকস, কারণ এতে ফ্যাট কম থাকে। ফলে পেট ভরা বোধ হয় ও শক্তি বেশী পাওয়া যায় । যার দরুন অতিরিক্ত খাবারও খেতে ইচ্ছা করে না। তাই পুষ্টিহীন ক্যালরিযুক্ত ফাস্টফুড বা জাংক ফুড বেশি না খেয়ে পুষ্টিকর টক দই খেতে পারেন যা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি পেতে টক দই

উচ্চ রক্তচাপ একটি মরণব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এটি হার্ট এ্যাটাকের ঝুকি বাড়ায়। উচ্চ রক্তচাপ থেকে দূরে রাখতে টক দইয়ের জুড়ি নাই।
প্রতিদিন টক দই খাওয়ার অভ্যাস করলে সেটি কোলেস্টরল ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে

টক দই শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে প্রভাব ফেলে। গরমকালে শরীরের জন্য আদর্শ খাদ্য টক দই। যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
তাই গ্রীষ্মকালে টক দই খেতে পারেন।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য টক দই

কম ফ্যাটযুক্ত টক দইয়ে থাকা ল্যাক্টোবেসিলাস, অ্যাসিডোফিলাস এর মতো বিভিন্ন প্রোবায়োটিকস থাকে যা রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (LDL) এলডিএল এর পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্ত শোধন বা পরিষ্কার রাখতে বিশেষ ভুমিকা রাখে। উচ্চ রক্ত চাপের রোগীরা নিয়মিত টক দই খেয়ে রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। নিয়মিত টক দই খেলে তা অন্য খাবার থেকে পুষ্টি নিয়ে শরীরকে সরবরাহ করে থাকে। ডায়বেটিস ও হার্টের রোগীরা পরিমিত ভাবে টক দই খেয়ে তাদের অসুখগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে টক দই

টক দইয়ের ল্যাকটিক কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করবে সহজেই। কারণ দই হজম শক্তি উন্নত করে, আর হজম হলে এমনিতেই কোষ্ঠকাঠিন্য পরাজিত হয়।
এ দই খেলে মানসিক চাপ এবং অ্যাংজাইটি কমে যায়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে না।

বদহজম দূর করার জন্য দই উপকারী

বদহজমের সমস্যা দূর করতে টক দই খুব দরকারি খাদ্য। এ দইয়ের ফারমেন্টেড এনজাইম খাবার হজমে সহায়তা করে এবং বদহজম প্রতিরোধ করতে ভূমিকা রাখে।

বুড়িয়ে যাওয়া বা অকাল বার্ধক্য রোধে

টক দই ব্রেইনকে স্ট্রেস দূরকারী উপকারী অ্যামাইনো এসিড “টাইরোসিন” সরবরাহ করে, যা মানসিক প্রশান্তি দেয় এবং ক্লান্তি কমায়। এছাড়া এটি শরীরে টক্সিন জমতে বাধা দেয়। শরীরে টক্সিন কমার ফলে ত্বকের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায়। এটি খাদ্যনালীকে পরিষ্কার রেখে শরীরকে সুস্থ রাখে ও ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধসহ অকাল বার্ধক্য থেকে বাঁচায়।

টক দই একটি পুষ্টিকর, তৃপ্তিকর, সর্বজন সমাদৃত ও সহজ লভ্য খাবার। খাদ্যগুণের নিরিখে টক দই হল অলরাউন্ডার। তাই প্রতিটি মানুষেরই উচিত নিয়মিত টক দই খাওয়া।

রূপচর্চায় টক দই

মুখের যত্নে দই এর ব্যবহার

রোদে যান না এমন কেউ নেই। আর রোদে গেলেই মুখ পুড়ে ছাই হয়ে যায় অনেকের। এ থেকে মুক্তি দিতে কিছু টক দই যথেষ্ঠ।
চলুন তা হলে দেখে নেই এর সঠিক ব্যবহার-
রোদে পোড়া দাগ দূর করার জন্যঃ
১. পাঁচ চামচ টক দই,
২. এক চামচ চন্দন গুঁড়ো,
৩. এক চামচ মসুর ডাল বাটা মিশিয়ে মুখ, হাত, পায়ে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ।
৪. শুকিয়ে গেলে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৫. এক মাস এই মাস্কটি লাগিয়ে ফলাফল দেখুন, ইনশাআল্লাহ আপনার মুখ তরতাজা হয়ে যাবে।

আবার-

তিন চামচ টক দই, ১/২ চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, এক চামচ বেসন মিশিয়ে মাস্ক হিসেবে লাগালে ত্বক ফর্সা হয়।

সেইসাথে- স্ট্রবেরি ফল দুইটি এবং পাঁচ চামচ টক দই ব্লেন্ড করে মুখে মাস্ক হিসেবে লাগান। ফলে আপনার ত্বক অনেক ফ্রেশ হবে এবং ত্বকের কোলাজেন এর সমতা রাখবে।

চুলের যত্নে দই এর ব্যবহার

চুলের যত্নে টক দইয়ের ব্যবহার দীর্ঘ দিনের। কিছু টক দই, একটি কলা ও একটি ডিম একসাথে ব্লেন্ড করে চুলে দিয়ে আধা ঘণ্টা রাখুন। অতঃপর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
এতে করে চুল পড়া কমবে, চুল নরম হবে এবং চুল তাড়াতাড়ি লম্বা হতে সাহায্য করবে।

মুখের ব্রণ দূর করতে টক দই

আমরা কম বেশি সবাই মুখে ব্রণের সমস্যায় ভুগে থাকি। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে। ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকরোধী উপাদান থাকায় টক দই দিয়ে ব্রণ নিরাময় করা যায়। এর জন্যে আপনাকে যা করতে হবে, যেখানে ব্রণ হয়েছে সেখানে টক দই মাখিয়ে আধা ঘন্টা রেখে দিতে হবে। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই কাজ শেষ। নিয়মিত এভাবে ব্যবহার করলে ত্বক পরিষ্কার থাকবে এবং ব্রণ নিরাময় হবে।

যাদের ত্বক শুষ্ক তারা মধু নিতে পারেন। তিন চা চামচ টক দই, আধা চামচ টাটকা কাঁচা হলুদ বাটা, এক চা চামচ বেসন মিশিয়ে মাস্ক হিসেবে
লাগান ত্বক ফর্সা হবে এবং মুখের ব্রণ দূর হবে। এছাড়াও স্টবেরি ফল ২ টি এবং ৫ চামচ টক দই ব্লেন্ড করে মুখে মাস্ক হিসেবে লাগালে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
যার ফলে আপনার ত্বক অনেক ফ্রেশ হবে ও মুখের ব্রণ দূর হবে।

ডার্ক সার্কেলের সমস্যায়

অনেকের চোখের নিচে বা আশেপাশে কালচে ভাব দেখা যায়। এর থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য টক দইয়ে তুলো চুবিয়ে চোখের কালচে ভাবে আলতো করে লাগিয়ে নিন। দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারের পরে দেখবেন আপনার চোখের কালচে ভাব অনেকাংশে কমে গেছে। দই চোখের কোলের ফোলাভাবও কমায় এবং এর ল্যাকটিক অ্যাসিড কালো ছোপ দূর করে।

ত্বকের সংক্রমন সারাতে টক দই

গায়ে এলার্জি অথবা লাল র‍্যাশ বেরিয়েছে? বা অন্য কোনও সংক্রমণ? বেছে নিন টক দই। র‍্যাশের উপরে ক্রিম লাগানোর মতো করে দইয়ের প্রলেপ লাগিয়ে নিন।
তারপর ব্যান্ডেজ জড়িয়ে রাখুন। যতদিন সংক্রমণ পুরোপুরি না কমছে, দিনে দু’বার এভাবে দই লাগান। দইয়ের প্রোবায়োটিকস যে কোনও সংক্রমণ কমাতে পারে।

দাগ দূর করতে

মুখে ব্রণের দাগ, মশার কামড়ের দাগ বা অন্য যে কোনও দাগছোপ, সব কিছু কমাতেই আপনার ভরসা টক দই। দইয়ের সঙ্গে অল্প পাতিলেবুর রস মিশিয়ে দাগের উপর লাগান, দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। কয়েকদিন নিয়মিত লাগালেই দেখবেন দাগ হালকা হতে শুরু করেছে।

শুষ্ক ত্বকের সমস্যা

মুখের শুষ্কতা ভাব দূর করতে টক দই অনেক বেশি কার্যকর। খানিকটা দই ক্রীমের মতো করে মুখে মেখে নিন, দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। দইয়ের ভরপুর ময়শ্চার আপনার ত্বক আর্দ্র আর কোমল করে তুলবে। বাড়তি তরতাজাভাব পেতে দইয়ে খানিকটা গোলাপজল মিশিয়ে নিতে পারেন।
এতক্ষণ কেবল দইয়ের উপকারিতার কথা জানানো হয়েছে এবার চলুন অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক ! 

দই যে যে ক্ষতি করে থাকে

সাধারণত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা দই এর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
সুতরাং, স্বভাবতই দই এমন একটি খাবার যা খেতে দেখলে লোভ সামলানো কঠিন।
কিন্তু ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সংযত হতে হবে। খালি পেটে টক দই খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

দই এর চেয়ে ছোট ছোট প্লাস্টিকের পাত্রগুলো রয়েছে সেগুলো মূলত পেট্রোলিয়াম থেকে তৈরি করা হয়ে থাকে যা মোটেও মাটির পক্ষে উপকারী কিছু নয়। পূর্বের সচরাচর দই মাটির ভাঁড়ে করে দেওয়া হতো। তবে এখন তার পরিবর্তে প্লাস্টিক স্থান দখল করে নিয়েছে। আমাদের বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই প্লাস্টিক গুলো পুর্নব্যবহার করা হয় না। ফলে তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

ঘুরে আসুন: দই পটল রেসিপি-একদম ভিন্ন রকমের একটি রেসিপি!

তো আশা করি আপনাদের আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে ! so, সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন !  ধন্যবাদ !

সূত্র:

১. সাজগোজ বিউটি টিপস
২. জাগো নিউজ লাইফস্টাইল

আশা করি ফুডলিংক বিডির এই টক দই এর উপকারিতা ব্লগটি ভালো লেগেছে। কোন প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট বক্সে দয়া করে জানাবেন।
ও হাঁ, আপনিও কিন্তু এরকম সুন্দর সুন্দর ফুড রেসিপি লিখতে বা ইউটিউবে রান্নার ভিডিও বানাতে পারেন! তাহলে এখনি যোগাযোগ করুন।
আরও ভালো জানার জন্য ইউটিউব চ্যানেল থেকে ঘুরে আসতে পারেন। আশা করি টক দই কেন খাবেন? ভিডিওটি দেখে আরও সহজে
বাসায় রান্না করতে পারবেন হোটেলের চেয়েও সুন্দর করে। প্রবন্ধটি সংরক্ষণে রাখতে আপনার সোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করে রাখুন।
যাতে প্রয়োজনে খুজে পেতে সহজ হয়। সাথে থাকার জন্য অন্তরের অন্তরস্থল থেকে এক রাশ প্রিতি ও ভালোবাসা রইল।

লেখাটি আবার পড়তে পড়তে চান? আপনার সোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *