ঝটপট স্নাক্স তৈরির রেসিপি খুঁজছেন? কম সময়ে ঘরোয়া উপকরণে নাস্তা তৈরী করতে চান? দ্রুত রান্নার জন্য দারুণ সুজি গৃহীনিদের প্রথম পছন্দ। সুজির হালুয়া, সুজির পিঠা, সুজির কেক, সুজির পায়েস, সুজির মিষ্টি থেকে শুরু করে হরেক রকমের মুচমুচে পিঠা-পুলি তৈরি করুন আজই! অবাক লাগছে! খুব অল্প সময়ে জিভে জল আনার মতো দারুণ কিছু রান্না সম্পর্কেআপনি জানতে পারবেন। রান্না শুরুর আগে সুজির উপকারীতা সম্পর্কে জেনে নেই। যার ফলে খাবার তৈরিতে উৎসাহ দ্বিগুণ হয় খাদ্যগুন জানার ফলে।
সুজির উপকারিতা
সুজি মূলত নামকরণ করা হয়েছে, একটি ইটালিয়ান শব্দ থেকে। যার বাংলা অর্থ তুষ। একটি ল্যাটিন শব্দ সিমিলা থেকে এই শব্দের আগমন। সাধারণত বিভিন্ন রান্না অথবা বেকিং এর কাজে সুজি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সুজির পুষ্টিগুণ
সুজিতে আছে লৌহ ও পটাসিয়াম। যা শরীরের হিমোগ্লোবিন বাড়াতে এবং হার্টকে শক্তিশালী করে। কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন-বি এবং
ভিটামিন-ই সহ সুজিতে উপস্থিত প্রোটি উপস্থিতির ফলে খাবার এটি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
এবার চলুন এক নজরে সুজির উপকারিতাগুলো জেনে নেওয়া যাক-
- রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সাহায্যে করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে।
- শরীরের ওজন কমায়।
- এনার্জি বৃদ্ধি করে।
- হার্টের জন্য ভালো।
- রক্তে শুর্করা নিয়ন্ত্রণ করে।
- শিশুদের এবং অসুস্থ রোগীদের খাবার হিসাবে উপাদেয়।
খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে এখানে রেসিপিটি দেখানো হয়েছে। আশা করি ভালো লাগবে !
সুজির কয়েকটি খাবারের রান্না প্রক্রিয়া
সুজির হালুয়া
খাবারের উপকরন :
- সুজি ১০০ গ্রাম অথবা আপনার প্রয়োজনমতো
- কিসমিস
- বাদাম কুচি (একাধিক বাদাম ব্যবহার করতে পারেন)
- তেজপাতা
- চিনি ১০০ গ্রাম (স্বাদ অনুযায়ী)
- লবণ
- এলাচ বা গরম মশলা
- গাওয়া ঘি চার চা চামচ (১০০ গ্রাম সুজি)
- আধা কেজি দুধ (দুধের পরিবর্তে পানি ব্যবহার করতে পারেন)
উপকরণ তো তৈরি চলুন এবার খুব অল্প সময়ে – সুজির হালুয়া তৈরি করা যাক!
সুজির হালুয়া তৈরির প্রণালী
সচরাচর আমাদের পরিবারে যখন কেউ অসুস্থ হয় তখন অসুস্থ ব্যক্তির জন্য একটি উপাদেয় খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।উপকরণ কম লাগে তাই এখনই অল্প সময়েই খাবারটি তৈরি করতে পারবেন।
ধাপ ১ : কড়াই বা প্যান গরম করে তাতে ঘি এবং তেল আধা কাপ দিন।অল্প আঁচে সুজ ভেজে নিন।অন্য কড়াইতে কিছুটা দুধ আর পানি ঢেলে ফুটিয়ে নেই।
ধাপ ২: গরম করা দুধ বা পানিতে ভেজে রাখা সুজি যোগ করুন। আপনার স্বাদ মতো চিনি, কিছুটা লবণ, কিসমিস, বাদাম যোগ করুন। ধীরে ধীরে নাড়তে হবে। আর মিশ্রণটি শুকিয়ে ঘন হলে চুলা থেকে নামিয়ে নিন।
বাচ্চাদের জন্য উপযোগী সুজির খাবার – ডিমের সুজি
ডিমের সুজির পুষ্টিগুণ
শিশুর জন্য ডিমের সুজি মুখরোচক এবং পুষ্টিকর খাবার। এর প্রধান উপাদান হিসেবে থাকবে সুজি, ডিম, সবজি, গুঁড় এবং তেল।
আমাদের দেশে শিশুদের প্রথম বাড়তি খাবার হিসেবে সুজি বেশ প্রচলিত। এতে শক্তি, আমিষ ও সামান্য পরিমাণে খাদ্য আঁশ থাকে।
যা শক্তি বৃদ্ধি এবং দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও এতে আপনার শিশুর জন্য অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড, আয়রন, ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন এ ডি ই এবং বি কমপ্লেক্স থাকে। চালকুমড়া, গাজর এবং অন্যান্য সবজিতে খনিজ লবণ, প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, আঁশ, শর্করা ও পানি থাকে। ভিটামিন ও খনিজ লবণের মধ্যে থাকে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নায়াসিন, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। গুড় আয়রনের অন্যতম প্রধান উৎস, এছাড়া গুঁড় দেহের শক্তি বৃদ্ধির জন্য কাজ করে। রেসিপিতে ব্যবহৃত তেল বা চর্বি দ্রবনীয় ভিটামিনের শোষণকে তরান্বিত করে এবং অনেক সময় স্নেহ জাতীয় পদার্থের ভান্ডার হিসেবে কাজ করে।
- ডিমের সুজি রান্নার জন্য যে পরিমাণ উপাদান ব্যবহার করতে পারেন :
- সুজি: ৩০ (গ্রাম)/ ২ টেবিল চামচ
- ডিম: ১ টি বা ২ টি
- চালকুমড়া: পনের গ্রাম বা ১ পিস
- গাজর : ১০ গ্রাম বা প্রয়োজন মতো ছোট এক পিস
- তেল: ৫ (গ্রাম) বা ১ চা চামচ
- গুঁড়: ১৫ (গ্রাম)/ ১.৫ চা চামচ
- লবণ: স্বাদমত
- পানি: ১৬৫ (গ্রাম) বা ৩/৪ গ্লাস
ডিমের সুজি তৈরীর প্রস্তুত প্রণালী:
ধাপ-১
একটি পাত্রে সুজি নিয়ে অল্প আঁচে ভেজে নেবেন। সুজি হালকা বাদামী বা লালচে রংয়ের হলে এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি যোগ করবেন। সব সবজি ভালোমত ধুয়ে ছোট সাইজে কেটে নিন। (সবজি ধোয়ার পরে কেটে নিলে ভালো হয়) অন্যদিকে চুলার উপর রাখা সুজি হালকাভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে, যাতে পাত্রের গায়ে লেগে না যায়।
ধাপ-২
এরপর পাত্রে একটি ডিম ভালোমত ফেটে নিন। সুজি ভালোমত সিদ্ধ হয়ে গেলে ফেটে রাখা ডিমটি ঢেলে দিন। সাবধানে দ্রুত নাডতে থাকুন।এতে ডিম সুজির সাথে ভালোভাবে মিশে যায়। আবারও অল্প অথবা মিডিয়াম আঁচে কিছুক্ষণ (২-৩ মিনিট) রান্না করুন। এবার স্বাদ অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ, তেল এবং গুঁড় দিয়ে দিন। এবারে ভালোভাবে নাড়তে থাকুন, যাতে সবগুলো উপকরণ সঠিকভাবে একসাথে মিশে যায়।সবগুলো উপকরণ ভালোমত মিশে গেলে এবং অতিরিক্ত পানি শুকিয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে হালকা গরম ডিমের সুজি পরিবেশন করুন।
বাচ্চা কমপক্ষে ৬ মাস বয়সী হলে, আপনি ধীরে ধীরে শিশুর খাদ্য তালিকার একটি অংশ হিসাবে সুজি তৈরি করতে পারেন।
নিঃসন্দেহে আপনার শিশুদের জন্য সুস্বাদু খাবার হবে ডিমের সুজি। এটি আপনার বাচ্চার মানসিক এবং শারীরিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
ডিম ছাড়া সুজির কেকঃ
উপকরণ ও প্রস্তুত প্রনালী
ডিম ছাড়া সুজির কেক একটি জনপ্রিয় খাদ্য যারা ডিম বা আমিষ খেতে পারেন না। এই খাবারে লাগবে সুজি, চিনি,বাটার মিল্ক, বেকিং পাউডার, খাবার সোডা, রান্নার তেল এবং লবণ।
শুরুতেই১ কাপ সুজিকে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।তারপর এতে ১/২ কাপ চিনি ও ১ কাপ বাটার মিল্ক যোগ করতে হবে।ভালো ভাবে মিশ্রণটি মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট এ রাখতে হবে।রেস্ট এর পরে মিশ্রণে ১/২ চা চামচ বেকিং পাউডার আর ১/২ চা চামচ খাবার সোডা দিতে হবে।আর সুঘ্রাণ এর জন্য ভ্যানিলা এসেন্স দিতে হবে।আর সব শেষে ১/৪ কাপ তেল নিয়ে তা ভালো করে মিক্স করতে হবে।
পরবর্তিতে একটি প্যানে বসিয়ে তাতে তেল ব্রাশ করে বাটার পেপার বা কাগজ দিতে হবে।আর এতে সুজির এই মিশ্রণ ঢেলে হাল্কা থেকে মাঝারি আঁচে ৩০/৩৫ মিনিট ঢেকে রাখতে হবে। আর হয়ে যাবে মজাদার ডিম ছাড়া সুজির কেক।
সুজির মিষ্টি তৈরি
তৈরির উপকরণ ও পদ্ধতিঃ
সুজির মিষ্টি তৈরি খুবই সহজ আর খেতে লোভনীয়। এটি প্রস্তুতে লাগবে সুজি,দুধ, তেল/ঘি,চিনি,এলাচ গুড়ো, ময়দা ( চাইলে আপনি তা বাদ দিতে পারেন)।
শুরুতেই ডো তৈরি করতে হবে,তারজন্য একটি কড়াইতে তেল /ঘি দিয়ে তাতে সুজি ভালো করে হালকা টেলে নিন।
পরে তার মধ্যে প্রয়োজন অনুযায়ী দুধ দিয়ে নাড়তে থাকুন।আর চিনি ও এলাচ গুড়ো যোগ করুন।
সম্পুর্ন মিশ্রণ শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত নাড়বেন, যেন লেগে বা দলা না পাকিয়ে যায়।
ডো প্রস্তুত হলে তা কিছুক্ষন রেস্ট করতে দিন। চুলায় তেল গরম দিয়ে তাতে ডো থেকে ছোট গোলা করে ভেজে নেই। অন্য পাশে সিরার জন্য পানি, চিনি ও এলাচ গুড়ো দিয়ে মিশ্রণ বানিয়ে নিন।ভেজে রাখা সুজির গোলা গরম অবস্থায় সিরায় দিয়ে ১০ /১৫ মিনিট জ্বাবা দিলে তা ফুলে উঠবে।আর চাইলে গরম বা ঠান্ডা অবস্থায় এই মিষ্টি পরিবেশন করতে পারেন।
সুজি দিয়ে তৈরি খাবারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং সতর্কতা
- খাবার তৈরির সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাকে মনে রাখতে হবে। প্রথম শর্ত জীবাণুমুক্ত, নিরাপদ সুষম খাবার।
কারণ শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম ঠিক রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সঠিক খাবারের বিকল্প নেই।
- ভেজাল উপকরণ দিয়ে তৈরি খাবার বা বাসি খাবার খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তো বাড়বেই না; বরং শরীর রোগের বাসা বাধে।
- রোগীর পথ্য হিসেবে সুজিতে অতিরিক্ত তেল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না।
- আপনি যদি কোন জটিল রোগে আক্রান্ত হন অথবা নিয়মিত কোন মেডিকেল চেকআপে থাকা অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সুজির খাবার খাবেন।
- সুজি তৈরিতে অবশ্যই কাঠের স্প্যাচুলা ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনার খাবার লেগে যাবে না পাত্রে।আর এটি স্বাস্থ্যসম্মত।
- সুজি তৈরির সময় পানি ও আগুনের ব্যবহার নিয়ে সচেতন থাকবেন।
- অতিরিক্ত পরিমাণ সুজি গ্রহণের ফলে এতে উপস্থিত ফাইবারের কারণে পেট ফাঁপে ও পেটে খিঁচুনী দেখা দিতে পারে। তবে পরিমিত পরিমাণ সুজির তৈরি খাবার উপাদেয় এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।
আরও পড়ুন
- জর্দা রেসিপি-ঘরেই হবে মিষ্টি জর্দা পোলাও!
- টক দই এর উপকারিতা এবং অপকারিতা
- রান্নার রেসিপি ব্লগ লিখবেন যেভাবে !
- খিচুড়ি রান্নার রেসিপি দেখে নিন!
- ফ্রেঞ্চ ফ্রাই রেসিপি-জটজলদি নাস্তা!
আশা করি ফুডলিংক বিডির এই সুজি দিয়ে তৈরি রান্নাগুলি ভালো লেগেছে। এই বিষয়ে আপনার কোন প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট বক্সে দয়া করে জানাবেন।
ও হাঁ, আপনিও কিন্তু এরকম সুন্দর সুন্দর ফুড রেসিপি লিখতে বা ইউটিউবে রান্নার ভিডিও বানাতে পারেন! তাহলে এখনি যোগাযোগ করুন।
আরও ভালোভাবে জানতে হলে ইউটিউব চ্যানেল থেকে ঘুরে আসতে পারেন। আশা করি সুজি বানানোর ভিডিওটি দেখে আরও সহজে হোটেলের চেয়েও সুন্দর করে, বাসায় রান্না করতে পারবেন।মজাদার এই সুজির রেসিপিগুলো সংরক্ষণ করতে আপনার সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে রাখুন অথবা বুকমার্ক দিয়ে আমাদের পেজটি সেভ করে রাখুন, যাতে প্রয়োজনে খুঁজে পেতে পারেন। শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য অন্তরের অন্তরস্থল থেকে এক রাশ প্রিতি ও ভালোবাসা রইল।